নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এফ এইচ রাজু
ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া বন্দর বাজারে মাহে রমজান উপলক্ষে গত ১লা এপ্রিল থেকে মাইকিং করে সহনশীল মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে ভোক্তাদের মনোরঞ্জন করেছেন শিক্ষার্থী ও ক্ষুদে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান। আসছে আগামী ২১ রমজান থেকে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনা সমালোচনার শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছেন এই তরুন। মোহাম্মদ মেহেদী হাসান (২৭) ভান্ডারিয়া পৌর শহরের নিজ ভান্ডারিয়া চারাপট্রি হাওলাদার বাড়ির মৃত মন্টু হাওলাদারের ছেলে। মেহেদী হাসান পেশায় পড়াশোনার পাশাপাশি ভান্ডারিয়া ভুবনেশ্বর ব্রিজ সংলগ্ন আল্লাহ্র দান এন্টারপ্রাইজ এর প্রতিষ্ঠাতা। তাহার প্রধান ব্যবসা এল পি গ্যাস, জ্বালানি তেল ইত্যাদি।
গত ১লা এপ্রিল মেহেদী হাসান তাহার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে কেজি তে নয় বরং পিচ হিসেবে সল্প মূল্যে তরমুজ বিক্রয় ও ক্রয়অসাধ্য ব্যক্তিদের বিনামূল্যে তরমুজ বিতরণের বিষয়টি তুলে ধরে ২১শে রমজান থেকে রমজানের বিদায়লগ্ন পর্যন্ত সর্বোচ্চ্য ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রয় করার আগাম ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই তা ভাইরাল হয়ে পরে। তবে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম হইতে সর্বোচ্চ ২ কেজি পর্যন্ত গরুর মাংস কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে তিনি এক কেজি থেকে নয় কেজি ওজনের এক হাজারেরও বেশি তরমুজ ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন যা বর্তমান বাজারে নিতান্তই বিরল। তাহার এহেন করমকান্ড জনমনে বেশ সাছন্দের পাশাপাশি মহৎ উদ্যোগ বলে সমর্থন ও সাধুবাদ জানিয়েছেন ভিবিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সেই সাথে তাহার উদ্দগ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সহযোগিতার কথাও জানিয়ছেন অনেকে।
৩রা মার্চ সন্ধ্যায় এসকল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তরে মেহেদী হাসান বলেন, প্রতি রমজানে ভিবিন্ন দেশের দ্রব্যমূল্য সর্বস্তরের মানুষের ক্রয়সাধ্যর কথা চিন্তা করে কমানো হয় তবে আমাদের দেশে হয় তার বিপরীত। এছারাও অনেক পন্যের দাম আগাম ঘোষণা ছাড়াই হুট করে বেড়ে যায় এবং একসময় তা নিম্ন আয়ের সহ মধ্যবিক্তদেরও ক্রয় সাধ্যের বাইরে চলে যায়। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি শুধু চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারনে নয় বরং কিছু কালোবাজারি, সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে হয়ে থাকে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
সেই সকল বিষয় চিন্তা করে এবছরের পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমাদের ভান্ডারিয়ার প্রতিটি নিম্ন ও মধ্যবিক্তদের মাঝে সল্প এবং বিনামুল্লে প্রথমত তরমুজ এরপর গরুর মাংস পর্যায়ক্রমে ফলমূল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমি ও আমার নিকটতম ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মত পটুয়াখালীতে একটি তরমুজ ক্ষেত ক্রয় করে আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। অতঃপর ভিবিন্ন জায়গাতে খোজ নিয়ে জানলাম ৩৫ থেকে ৫০ টাকা মুল্যের তরমুজ এখন ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ একটাই যাহাতে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়, এবং আমাদের সাথে যে যার অবস্থান থেকে যেন নীরব প্রতিবাদে উৎসাহিত হয়। আমাদের এই স্বল্পমূল্যে তরমুজ বিক্রয়য়ের কার্যক্রমটি আগামী ২০শে রমজান পর্যন্ত চালু থাকবে।
২১শে রমজান আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী ২য় কার্যক্রম সফল করার লক্ষে প্রয়োজনে সীমান্ত অঞ্চল থেকে গরু কিনে ৮০০ বা ৭৫০ টাকায় নয় বরং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রয় করিতে চাই। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বছরে একবার হলেও গরুর মাংস কিনতে পারবে বলে মনে করি। আমাদের লাভের কোন প্রয়োজন নেই শুধু মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা পেলেই চলবে। লাভ কি হবে সেটা বড় কথা নয়। মানুষের জন্য কটটুকু করতে পেরেছি সেটাই বড় কথা।
এদিকে মেহেদী হাসানের সেচ্ছাসেবী সহকর্মী মোঃ সিয়ান পোদ্দার (২৪) জানান, ইতিপূর্বে আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক গুলো মধ্যবিক্ত, দরিদ্র এবং হতদরিদ্র পরিবার সহ ইমাম ও খাদেমগনের একটি তালিকা তৈরি করি এবং মেহেদী হাসান ভাইয়ের ব্যক্তিগত অর্থায়নে পঞ্চাশ হাজার টাকার ইফতার সামগ্রী তালিকাভুক্ত ঐ সকল ব্যক্তিদের মাঝে ১ম রমজান থেকে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি, যাদের বারিতে গিয়ে দরজা বন্ধ পেয়েছি তাদের দরজার সামনে ইফতারের ব্যাগ রেখে চলে এসেছি, এমনকি খবর পেয়ে যারা এগিয়ে এসেছেন তাহাদের ইফতারি সহ যাতায়াত ভারাও দিয়ে পাঠিয়েছি তবে এসকল তথ্য সম্পূর্ণই গোপন রাখা হয়েছে। এর কারন আমরা ভাইরাল নয় বরং গোপনে দান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
মেহেদী হাসানের আর এক সেচ্ছাসেবী সহকর্মী মোঃ রতন খান (২৮) জানান, মেহেদী হাসান জনকল্যাণমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক আমরা সম্মিলিত পরামর্শ করে থাকি অতঃপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমরা যদি কোনকিছু দান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি তাহলে তা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী করার চেষ্টা করি কেননা তিনি কোনকিছু দান করলে তা অতি গোপনে দান করতে বলেছেন। আমাদের এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের কোনপ্রকার রাজনৈতিক, বৈদেশিক অথবা অন্য কোনপ্রকার সহযোগিতা ইতিপূর্বে গ্রহণ করিনি। তবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে যে কেউ চাইলে অর্থ, শ্রম ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
আমাদের সকলের একটাই লক্ষ, আমরা যে যার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব এগিয়ে আসি। আপনার আমার সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় একটা সময় দেখবেন সকল সিন্ডিকেট, কালোবাজারি সহ দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে নেমে এসেছে। আমাদের এসকল উদ্যোগ গুলেকে কেউ ব্যক্তি আক্রমন, রাজনৈতিক, এমনকি অসৎ উদ্দেশ্য বলে আখ্যায়িত করিবেন না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
Leave a Reply